Archive for the ‘আশরাফ সিদ্দিকী (১৯২৭ – )’ Category

>…
পাখী সব করে রব রাতি পোহাইল
কাননে কুসুম কলি সকলি ফুটিল।

কবেকার পাঠশালায় পড়া মন্ত্রের মতো সেই সুর
সুর নয় স্মৃতির মধুভাণ্ডার…………
সেই আমার দেশ মাঠ বন নদী
আমার দেশের জারি সারি ভাটিয়ালি মুর্শিদি
আরও কত সুরের সাথে মিশে আছে
আমার মায়ের মুখ
আমার মায়ের গাওয়া কত না গানের কলি !
বিন্নী ধানের মাঠের ধারে হঠাৎ কয়েকটি গুলির আওয়াজ…….
কয়েকটি পাখির গান শেষ না হতেই তারা ঝরে গেল
            পড়ে গেল মাটিতে।

সেই শোকে কালবৈশাখীর ঝড় উঠলো আকাশে
মাঠ কাঁপালো
ঘাট কাঁপালো
বাট কাঁপালো
হাট কাঁপালো
বন কাঁপালো
সন কাঁপালো
ইতিহাস থমকে দাঁড়িয়ে লিখে নিলো সব…………….
তাই তো সহস্র পাখির কলতানে আজ দিগন্ত মুখর
তাই তো আজ দ্যাখো এ মিছিলে এসে দাঁড়িয়েছেন আমার মা
যিনি বাংলাভাষায় কথা বলা বড় ভালোবাসেন
কথায় কথায় কথকতা কতো রূপকথা
আর ছড়ার ছন্দে মিষ্টি সুরের ফুল ছড়ান
তিনি এখনো এ মিছিলে গুনগুন করে গাইতে পারেন:
            পাখী সব করে রব রাতি পোহাইল।
            কাননে কুমুম কলি সকলি ফুটিল।।
            রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে।
            শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে।।

>…

বাণিজ্যেতে যাবো আমি সিন্দাবাদের মতো
পাহাড়-সাগর-অরণ্য-মাঠ ছাড়িয়ে শত শত।
মাগো আমায় দাও সাজিয়ে ময়ূরপঙ্খীখানা
মাগো আমি আজকে তোমার শুনবো না আর মানা।

কোথায় আছে ঘুমতি নদী কোথায় মায়াবন ?
কোথায় আছে সোনার টিয়া কোথায় হীরামন ?
সোনার আলোর মুকুটপরা কোন্ পাহাড়ের পার
ঝিলিক্ মারে ক্ষীর সাগরে গজমোতির হার ?
সে-সব দেশে যাবার তরে মন যে কেমন করে
মাগো আমার ময়ূরপঙ্খী সাজাও ত্বরা ক’রে।
সে-সব দেশে যাবো আমি শুনবো না আর মানা-
মাগো আমায় দাও সাজিয়ে ময়ূরপঙ্খীখানা।

শম্ শম্ শম্ হাওয়ার বেগে কাঁপবে নায়ের পাল
সিন্দাবাদের মতন আমি ধ’রবো ক’ষে হাল।
সাতটি হাজার সবুজ সেনার সাতটি হাজার দাঁড়
ঝপ্ ঝপ্ ঝপ্ তালে তালে ফেলবে বারে বার।
শাঁই শাঁই শাঁই ময়ূরপঙ্খী ছুটবে তীরের মতো
অচিন্ পাথার অচিন্ নদী ছাড়িয়ে শত শত।
মাগো আমায় দাও সাজিয়ে ময়ূরপঙ্খীখানা
মাগো আমি আজকে তোমার শুনবো না আর মানা।

>…
ছেলেটা এসেছে সেই কোন্ দূর পল্লী গ্রাম থেকে
কখনো বাসের ছাদে, কখনো পায়ে হেঁটে
কখনো ভিক্ষা মেগে-মেগে
সব শুনে রাখলেন শহরের বেগম সাহেবা।

ভালো ভালো খাদ্য পায়- উপরি পয়সাও পায়
ছেলেরা দিয়েছে কতো পুরাতন জামা আর জুতো
কিন্তু কি স্বভাব দেখো খেতে দিলে ছেলেটা কেবল
থালা নিয়ে বসে থাকে- কখন কখন
দুই ফোঁটা অশ্র“ ফেলে অকারণ।
তবে কি সে বেশি চায়? বেশি খায়? হা-ভাতে কি?
না- তাও তো নয়-
তারপর আরও অশ্র“ জমা হয় চোখে।

ছেলেটা এতোই বোকা-গেঁয়ো-সে একদিন
শুনে-শুনে পোস্টাফিসে গিয়ে
শুধালো ডাকেতে ভাততরকারি ডাল
গ্রামে কি পাঠানো যাবে ডাক বাক্সে ভ’রে?
যেখানে সবাই পিতা-মাতা-ভাই-বোন উপবাসী
পক্ষকাল ধরে-
না- ছেলেটা কেমন যেন বোকা- উড়ু উড়ু
কাজে মন নেই

ছেলেটা বিদায় হলো কাল সন্ধ্যায়।