Archive for the ‘প্রেমেন্দ্র মিত্র (১৯০৪ – ১৯৮৮)’ Category

>…
আমায় যদি হঠাৎ কোনো ছলে
কেউ ক’রে দেয় আজকে রাতের রাজা,
করি গোটাকয়েক আইন জারি
দু’এক জনায় খুব কষে দিই সাজা।
মেঘগুলোকে করি হুকুম সব
ছুটি তোদের, আজকে মহোৎসব।
বৃষ্টি-ফোঁটার ফেলি চিকন চিক্
ঝুলিয়ে ঝালর ঢাকি চতুর্দিক,
দিলদরিয়া মেজাজ করে কই,
বাজগুলো সব স্ফূর্তি করে বাজা।
হাওয়ায় বলি, হল্লা করে চল
তারার বাতি নিভিয়ে দলে-দল,
অন্ধকারে সত্যি কথার শেষে
রাজকন্যা পদ্মাবতীর দেশে।
ঘুমে পুরীর সেপাইগুলো ঢোলে,
তাদের ধরে খুব কষে দেই সাজা।
আমায় যদি হঠাৎ কোনো ছলে
কেউ করে দেয় আজকে রাতের রাজা।

সুপ্তিমগন পদ্মাবতীর পুরে
মহল বেড়াই টহল দিয়ে ঘুরে।
ধীরে গিয়ে বসি শিয়রদেশে
একটি মালা পরায়ে দিই কেশে,
হৃদয়খানি জোর করে নিই কেড়ে;
বুক বেঁধে দিই তাহারে সাজা।
আমায় যদি হঠাৎ কোনো ছলে
কেউ করে দেয় আজকে রাতের রাজা।
ওলট-পালট করি বিশ্বখানা
ভাঙি যেথায় যত নিষেধ মানা;
মনের মতো কানুন করি ক’টা
রাজা হওয়ার খুব করে নিই ঘটা।
সত্য তা সে যতই বড় হোক
কঠোর হলে দিই তাহারে সাজা।
আমায় যদি হঠাৎ কোনো ছলে
কেই করে দেয় আজকে রাতের রাজা।

>…
এক যে ছিল তেপান্তর
            করত কেবল ধু ধু।
চাইলে একা থাকার দুঃখে
            একটি নদী শুধু।
একটি নদী ছোট্ট নদী
            কুলুকুলু বইবে,
সাধ হলে তার সাথে দুটো
            মনের কথা কইবে।
ছিল একটা ছোট্ট নদী
            সাধাসাধি করতে,
তেপান্তরে বইতে রাজি
            হল একটি শর্তে।
পাহাড় আগে চাই একটা
            হবে তারই ঝর্ণা,
নইলে কে যায় তেপান্তরে
            দিক না যতই ধরনা !
বললে পাহাড় আসুক নদী
            ঝর্ণা হয়ে ঝরতে,
তার বদলে তাজ তুষারের
            চাই যে মাথায় ধরতে।
তাই হল। সব পেল সবাই
            শাদা মুকুট পাহাড়,
ঝর্ণা থেকে হল নদী
            তেপান্তরের বাহার।
যার যা খুশি পেতেও পারে–
            শুধু চাওয়ার আগে,
ইচ্ছেগুলোয় এই দুনিয়ার
            ছন্দ যেন লাগে।

>…

হাঁকে ফিরিওলা— কাগজ বিক্রী,
পুরানো কাগজ চাই!
ঘরের কোণেতে সঞ্চিত যত
তাড়াগুলি হাতড়াই ।
পুরানো কাগজ চাই ।
বহুদিন ধরে জঞ্জাল বাড়ে
সের দরে বেচি তাই ।
কেমন করিয়া একটি তাহার
হঠাত্ নজরে পড়ে,
দেখি সমুদ্রে যাত্রী-জাহাজ
কোথাও ডুবিল ঝড়ে ।
হঠাত্ নজরে পড়ে,
আবার কোথায় মানুষের মাথা,
বিকাল খুলির দরে ।

নিরুদ্দেশ কে সন্তান লাগি
ঘোষিছে পুরস্কার,
মৃত্যুঞ্জয় অমৃত কারা
রিছে আবিষ্কার ।
ঘোষিছে পুরস্কার,
পলাক খুনে লুকায়ে কোথায়
চাই যে হদিস্ তার ।

কোন সে বধুর বুকের আগুন
ভিতর করিয়া খাক্,
অবশেষে লাগে বসনে তাহার,
পুড়ে গেল সাতপাক ।
ভিতর করিয়া খাক্,
কোন্ সে গিরির গরল অনল
ঘটাল দুর্বিপাক ।

হারানো তারিখ ফিরে আসে ফের
পুরানো কাগজ পড়ি ;
আমার নয়নে সহসা পোহায়
সে দিনের বিভাবরী ।
পুরানো কাগজ পড়ি,
রাখিল ধরনী সেই দিনটির
পায়ের চিহ্ন ধরি ।

সে পদচিহ্ন কোথায় মিলাল
তারপর নাহি খোঁজ!
মানুষের ঘরে সকলের বড়
উত্সব নওরোজ ।
তারপরে নাহি খোঁজ ;
যাত্রী জাহাজে ডুবিল যে, বুঝি,
তারো ঘরে আজি ভোজ ।

রক্তে ছোপান অশ্রুতে ভেজা
পুরাতন যত খাতা,
সব জঞ্জাল আজিকে, হলেও
রঙীন সুতোয় গাঁথা ।
পুরাতন যত খাতা,
তাতে কোন্ দিন কি দাগ লাগিল
কে বৃথা ঘামায় মাথা ।

হাঁকে ফিরিওয়ালা, কাগজ বিক্রী,
পুরানো কাগজ চাই ।
ঘর ভরি যত মিছে জঞ্জাল
জমাবার নাই ঠাঁই ।
পুরানো কাগজ চাই ;
আদর যহার ফুরালো, তাদেরে
সের দরে বেচ ভাই।