Archive for the ‘যোগীন্দ্রনাথ সরকার (১৮৬৬ – ১৯৩৭)’ Category

>…
কাকাতুয়া, কাকাতুয়া, আমার যাদুমণি,
সোনার ঘড়ি কি বলিছে, বল দেখি শুনি ?

বলিছে সোনার ঘড়ি, “টিক্ টিক্ টিক্,
যা কিছু করিতে আছে, করে ফেল ঠিক।
          সময় চলিয়া যায়-
          নদীর স্রোতের প্রায়,
যে জন না বুঝে, তারে ধিক্ শত ধিক।”
বলিছে সোনার ঘড়ি, “টিক্ টিক্ টিক্।”

কাকাতুয়া, কাকাতুয়া, আমার যাদুধন,
অন্য কোন কথা ঘড়ি বলে কি কখন ?

মাঝে মাঝে বল ঘড়ি, “টঙ্-টঙ্-টঙ্,
মানুষ হইয়ে যেন হয়ো না ক সঙ।
          ফিটফিটে বাবু হলে,
          ভেবেছ কি লবে কোলে ?
পলাশে কে ভালবাসে দেখে রাঙা রঙ্।”
মাঝে মাঝে বলে ঘড়ি, “টঙ্-টঙ্-টঙ্।”

>…
হারাধনের দশটি ছেলে
          ঘোরে পাড়াময়,
একটি কোথা হারিয়ে গেল
          রইল বাকি নয়।

হারাধনের নয়টি ছেলে
          কাটতে গেল কাঠ,
একটি কেটে দু’খান হল
          রইল বাকি আট।

হারাধনের আটটি ছেলে
          বসলো খেতে ভাত,
একটির পেট ফেটে গেল
          রইল বাকি সাত।

হারাধনের সাতটি ছেলে
          গেল জলাশয়,
একটি সেথা ডুবে ম’ল
          রইল বাকি ছয়।

হারাধনের ছয়টি ছেলে
          চ’ড়তে গেল গাছ,
একটি ম’ল পিছলে পড়ে
          রইল বাকি পাঁচ।

হারাধনের পাঁচটি ছেলে
          গেল বনের ধার,
একটি গেল বাঘের পেটে
          রইল বাকি চার।

হারাধনের চারটি ছেলে
          নাচে ধিন ধিন,
একটি ম’ল আছাড় খেয়ে
          রইল বাকি তিন।

হারাধনের তিনটি ছেলে
          ধরতে গেল রুই,
একটি খেলো বোয়াল মাছে
          রইল বাকি দুই।

হারাধনের দুইটি ছেলে
          মারতে গেল ভেক,
একটি ম’ল সাপের বিষে
          রইল বাকি এক।

হারাধনের একটি ছেলে
          কাঁদে ভেউ ভেউ,
মনের দুঃখে বনে গেল
          রইল না আর কেউ।

>…
এক যে আছে মজার দেশ, সব রকমে ভালো,
রাত্তিরেতে বেজায় রোদ, দিনে চাঁদের আলো !
       আকাশ সেথা সবুজবরণ গাছের পাতা নীল;
       ডাঙ্গায় চরে রুই কাতলা জলের মাঝে চিল !
সেই দেশেতে বেড়াল পালায়, নেংটি-ইঁদুর দেখে;
ছেলেরা খায় ‘ক্যাস্টর-অয়েল’ -রসগোল্লা রেখে !
       মণ্ডা-মিঠাই তেতো সেথা, ওষুধ লাগে ভালো;
       অন্ধকারটা সাদা দেখায়, সাদা জিনিস কালো !
ছেলেরা সব খেলা ফেলে বই নে বসে পড়ে;
মুখে লাগাম দিয়ে ঘোড়া লোকের পিঠে চড়ে !
       ঘুড়ির হাতে বাঁশের লাটাই, উড়তে থাকে ছেলে;
       বড়শি দিয়ে মানুষ গাঁথে, মাছেরা ছিপ্ ফেলে !

জিলিপি সে তেড়ে এসে, কামড় দিতে চায়;
কচুরি আর রসগোল্লা ছেলে ধরে খায় !
       পায়ে ছাতি দিয়ে লোকে হাতে হেঁটে চলে !
ডাঙ্গায় ভাসে নৌকা-জাহাজ, গাড়ি ছোটে জলে !

মজার দেশের মজার কথা বলবো কত আর;
চোখ খুললে যায় না দেখা মুদলে পরিষ্কার !

>…

    ‘দাদ্খানি চাল্, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
    দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিম-ভরা কৈ।
    পথে হেঁটে চলি, মনে মনে বলি, পাছে হয় ভুল ;
    ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয়, ছিঁড়ে দেবে চুল।

    ‘দাদ্খানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
    দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিম-ভরা কৈ।’

    বাহবা বাহবা- ভোলা ভুতো হাবা খেলিছে তো বেশ !
    দেখিব খেলাতে, কে হারে কে জেতে, কেনা হলে শেষ।
    ‘দাদ্খানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
    ডিম-ভরা বেল, দু’টা পাকা তেল, সরিষার কৈ।’

    ওই তো ওখানে ঘুড়ি ধরে টানে, ঘোষেদের ননী ;
    আমি যদি পাই, তা হলে উড়াই আকাশে এখনি !
    দাদ্খানি তেল, ডিম-ভরা বেল, দুটা পাকা দৈ,
    সরিষার চাল, চিনি-পাতা ডাল, মুসুরির কৈ !

    এসেছি দোকানে- কিনি এই খানে, যত কিছু পাই ;
    মা যাহা বলেছে, ঠিক মনে আছে, তাতে ভুল নাই !
    দাদ্খানি বেল, মুসুরির তেল, সরিষার কৈ,
    চিনি-পাতা চাল, দু’টা পাকা ডাল, ডিম-ভরা দৈ।