Archive for the ‘মল্লিকা সেনগুপ্ত (১৯৬০ – )’ Category

>…

মশারি গুঁজে দিয়ে যেই সে শোয় তার
স্বামীর কালো হাত হাতড়ে খুঁজে নিল
দেহের সাপব্যাঙ, লাগছে ছাড় দেখি
ক্রোধে সে কালো হাত মুচড়ে দিল বুক
বলল, শোনো শ্বেতা, ঢলানি করবে না
কখনও যদি ওই আকাশে ধ্রুবতারা
তোমাকে ইশারায় ডাকছে দেখি আমি
ভীষণ গাড্ডায় তুমিও পড়ে যাবে,
শ্বেতার শ্বেত উরু শূণ্যে দুলে ওঠে
আঁকড়ে ধরে পিঠ, স্বামীর কালো পিঠ।

>…

ঊর্বশীর মেয়ে ওরা মধু মঞ্চে নাচতে এসেছে
সমস্ত শরীর যেন প্রতিবাদ, সালমা খাতুন
কালো সালোয়ার পড়া মেয়েটি দাঁড়াল মঞ্চে এসে
ওর কণ্ঠে কথা বলে উঠেছিল কথামানবীরা

দৃপ্ত কালো আগুনের মতো ওই মেয়েটিকে দেখে
বুঝতে পারেনি কেউ
ওর রক্তে ঢুকে গেছে পজিটিভ এইচ আই ভি
একটা একটা কোষ মরে যাচ্ছে পল অনুপল
আর মাত্র এক মাস আয়ু আছে ওর

বেবি সিং মঞ্চে এসে দাঁড়াল এ বার
রোগা ঝর্নার মতো তিরতিরে মেয়ে
নাচের মুদ্রায় এত তির্যক বিদ্রোহ !
বাপের হদিশ ঠিক বুঝতে পারেনি কোনও দিন
মায়ের ধারণা, কোনও সর্দারজিই হবে ওর বাপ
বেওয়ারিশ জন্মের লজ্জায় ঘৃণায়
হোমে থাকতে এসেও মাঝরাত্রে কেঁদে ওঠা বেবি
পচা সমাজের দিকে নাচের মুদ্রায় যেন লাথি ছুড়ছিল —

বীণা সর্দার খালি গলায় এমন গান গেয়ে উঠল যে
মধুসূদন মঞ্চের বাতাস করুন হয়ে এল
তেজী হরিণীর মতো সারা মঞ্চে নেচে বেড়াচ্ছে সে
কে বলবে, তিনবার ওকে বিক্রি করে দিয়েছিল ওর বাবা !
নেপাল বর্ডার থেকে পুলিশ উদ্ধার করে এখানে এনেছে
পুরনো কথার ঘায়ে মাঝে মাঝেই ওর মাথা খারাপ হচ্ছে |

গঙ্গা মল্লিক এই মঞ্চে এসে কী আশ্চর্য কবিতা বলছে !
কথামানবীর কণ্ঠে শাহবানু, বেহুলা, দ্রৌপদী
কী ভাবে গঙ্গার মধ্যে সব একাকার !
বালিকা বয়সে ওর কাকা ওকে নিয়মিত ধর্ষণ করত
দগদগো ক্ষত নিয়ে কথামানবীর মঞ্চে এখন সে বাঁচতে এসেছে
বীনা গঙ্গা বেবি বা সালমা, ফুটফুটে এই কিশোরীরা
যে কেউ আমার ছাত্রি হয়ে ব্যাগ কাঁধে এসে দাঁড়াতে পারত
মহারাণা কাশীশ্বরী কলেজের দরজায়
বদলে ওদের কোও স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে
মার খাওয়া জন্তুর মতো পালিয়ে এসেছে ওরা মাথা নিচু

ঊর্বশীর মেয়েগুলি আমাদের পৃথিবীতে বাঁচতে চাইছে

>

ছড়া যে বানিয়েছিল, কাঁথা বুনেছিল
দ্রাবিড় যে মেয়ে এসে গমবোনা শুরু করেছিল
আর্যপুরুষের ক্ষেতে, যে লালন করেছিল শিশু
সে যদি শ্রমিক নয়, শ্রম কাকে বলে ?

আপনি বলুন মার্কস, কে শ্রমিক, কে শ্রমিক নয়
নতুনযন্ত্রের যারা মাসমাইনের কারিগর
শুধু তারা শ্রম করে !
শিল্পযুগ যাকে বস্তি উপহার দিল
সেই শ্রমিকগৃহিণী
প্রতিদিন জল তোলে, ঘর মোছে, খাবার বানায়
হাড়ভাঙ্গা খাটুনির শেষে রাত হলে
ছেলেকে পিট্টি দিয়ে বসে বসে কাঁদে
সেও কি শ্রমিক নয় !
আপনি বলুন মার্কস, শ্রম কাকে বলে !

গৃহশ্রমে মজুরী হয়না বলে মেয়েগুলি শুধু
ঘরে বসে বিপ্লবীর ভাত রেঁধে দেবে
আর কমরেড শুধু যার হাতে কাস্তে হাতুড়ি !
আপনাকে মানায় না এই অবিচার

কখনো বিপ্লব হলে
পৃথিবীর স্বর্গরাজ্য হবে
শ্রেণীহীন রাস্ট্রহীন আলোপৃথিবীর সেই দেশে
আপনি বলুন মার্কস, মেয়েরা কি বিপ্লবের সেবাদাসী
হবে ?