Archive for the ‘সমুদ্র গুপ্ত (১৯৪৬ – ২০০৮)’ Category

>…

তোমার আকাশ থেকে আমার জন্য
কেবলই লাবণ্য ঝরে না
মেঘ জমে শিশিরের ঘাম হয়ে
শিলা ও পাথর জমে মেঘে
বিষ্টির নাম করে

হাওয়ার চাদর উড়িয়ে তোমার অস্তিত্ব নামে
নেমে আসে
আমার পাতা ও কাণ্ডের ওপর
পাখির পালক হয়ে স্নিগ্ধতা গড়িয়ে পড়ে
কোনো কিছু স্নেহ নয় প্রিয়তা নয়
পাথর গড়িয়ে পড়ে গলে যায়

তোমার আকাশ থেকে আমার ওপরে
কোনোই লাবণ্য ঝরে না
তবু
টিকে থাকি বেঁচে থাকি
বিষ্টির লবণ একদিন লাবণ্য জমাবে

আমাদের জীবন শিকড়ে

>…

এইভাবে বিবাদ ও বিষাদে অন্তহীন ডুবে যাওয়া
কতদিন আর কতকাল
দ্বিধাহীন দ্বিত্বহীন একক সঞ্চারে
চেয়ারের হাতলের সাথে স্ট্যাটাসের শিকলে বাঁধা হাত
যেন চারপাশে আর কিছু নেই কেউ নেই

আমরা কি ভুলে যাবো ডুমরিয়া আত্রাই পেয়ারা বাগান
হাকালুকি শীতলক্ষার রক্তরাঙা জল
নড়াইল আর চিত্রার অবস্থান একটুয়ো না পাল্টানোর স্মৃতি কি
স্মৃতি থেকে বিস্মৃতির অতলে তলাবে

এইভাবে স্বপ্নে ও দুঃস্বপ্নে আবর্তিত হতে থাকা
কতদিন আর কতকাল
মন ও মননের অমন উত্থান কি আবার আসবে না

হাওয়াতে কান পেতে থাকি
নাকশীর্ষে জাতীয় পতাকার মতো ওড়ে মাছি
হে মাছি
স্বপ্নের দ্রুততায় পক্ষ ঘূর্ণনে শরীরে বসো না হে
এখনো মরিনি আমি বেঁচে আছি

>…

কে যায় আর কে কে আসে
বোঝা যায় না
বিশাল চওড়া পথে
কতো মানুষ কতো যানবাহন
এইসবের
কারা যায় আর কারা আসে
কে জানে

যাকে দেখা যাচ্ছে, চলে যাচ্ছে
অথচ সে যাচ্ছে না
তার গন্তব্য থেকে বোঝা যায় সে যাচ্ছে না
আসছে সে

আমাদের গমনগুলো
কীভাবে যে বদলে গেছে কবে
বোঝাই যায়নি

এখন সকলেরই যাওয়া কেবলই যাওয়া
যেন কোন গন্তব্য নেই
সম্মুখ ও পশ্চাত সব একাকার
সামনে ও পেছনে বলে কোন পদার্থ নেই

যেন, যাওয়াটাই উদ্দেশ্য কেবল
যাওয়াই জীবন
আমাদের কালে
ফিরে আসা বলে কোন কথা যেন নেই

>…

রাস্তার মধ্যিখানে শুয়ে আছে নির্বিকার একটি কুকুর
গাড়ি ঘোড়া ছুটে যাচ্ছে এদিক ওদিক
পাশ কেটে কুকুরের মাথার, ছায়ার
প্রাণহীন কুকুরের হৃদপিণ্ড কুঁকড়ে গেছে
খামচে ধরে রাজপথ কোঠাবাড়ি নাগরিক বিশাল শহর

বড়লোক গাড়ির নীচে চাপা পড়ে মানুষ আর
মানুষের সরল জীবন- এটাই নিয়ম, অথচ
কি তাজ্জব ! সমস্ত বিত্তশালী গাড়ি ঘোড়া
সতর্ক স্টিয়ারিংয়ে পাশ কাটছে
শুয়ে থাকা কুকুরের লাশ
যেন, এই লাশটাকে বাঁচাতেই হবে

পৃথিবীর রাজপথে চিৎপাত শুয়ে থাকা
এরকম কুকুরের লাশ যেন বাংলাদেশ

আসলে তো, বাংলাদেশ মানেই হলো
জীবনের মুখোমুখি বুলেটের অসভ্য চিৎকার
শোকচিহ্ণ কালোব্যাজ পৃথিবীর শহীদ মিনার

>…

‘তুমুল করতালির মধ্য দিয়ে সভা শেষ হলে
বক্তৃতার মধ্যেকার মিথ্যাগুলো
বাদুড়ের মতো উড়ে যায় বিভ্রান্তির অন্ধকারের দিকে
সেখানে রয়েছে স্বার্থের ডাঁসা পেয়ারা
খাবে কামড়াবে ছড়াবে ছিটকাবে আর
বাকিটা নষ্ট করবে এমনভাবে যেন
অন্য কারও আহারে রুচি না হয়

তুমুল করতালির মধ্যে দিয়ে সভা শেষ হলে
বক্তৃতার মধ্যেকার ধাপ্পাগুলো
উকুনের মতো দৌড়াতে থাকে লোভের চামড়ার দিকে
সেখানে রয়েছে এঁটে রক্তের সূক্ষ ফোয়ারা
কামড়াবে খাবলাবে আঁচড়াবে আর
চামড়ার ঘা বানাবে এমনভাবে যেন
নখ আঙুল বা চিরুনির দাঁত লাগাতেও বেদনা হয়

তুমুল করতালির মধ্য দিয়ে সভা শেষ হলে
সকলেই চলে যায় আপন গন্তব্যে, শুধু
সভাস্থলে পড়ে থাকা সত্যের লাশ দেখে
বাস্তবতা কাকের মতো ওড়ে আর হাহাকার করে
কারোই কুড়িয়ে নেবার মতো কিছুই আর থাকেনা পড়ে

>…

তোমরা কীভাবে যে কি কি বলো বুঝতে পারি না
নদীর চলে যাবার কথা বোঝা যায়
নদীর থেমে থাকার কথা বোঝা যায়
ঘাস খেতে খেতে
বাছুরের মাথা তুলে আকাশ দেখার কথা বোঝা যায়
মেঘ ও বৃষ্টির ভাষা বোঝা যায়
পথ ও বিপথের কথা বোঝা যায়
সন্ধ্যা কিংবা সকাল
বৃষ্টি ও রোদের ভিতরে গাছের ভাষা বোঝা যায়

চাল কিভাবে গুমরাতে গুমরাতে ভাত হয়
তা-ও বোঝা যায়
কিন্তু
তোমরা কি কি যে কীভাবে বলো বোঝা যায় না

>…

স্বাধীনতা জিনিসটা অন্যরকম
একেক পরিপ্রেক্ষিতে একেক বিষয়কেন্দ্রে
একেক পরিস্থিতিতে একেক চাহিদাক্ষেত্রে
স্বাধীনতার একেক চেহারা

আজ যা তোমার স্বাধীনতা
একই সাথে অন্যের ক্ষেত্রে বিপরীত
আবার
সহসাই এটির চিত্র ও ভঙ্গি পাল্টে যায়

নদীর স্বাধীনতা
কখনো উৎসে কখনো মোহনায়
কখনো কেবলি তার আকুল যাত্রার স্রোতে

মানুষের স্বাধীনতা
প্রতিদিন একই অবস্থানে থাকে
মানুষ কখনো স্বাধীনতার নিকটবর্তী হয়
আবার কখনো দূরে সরে যায়

>…

ভালোবাসা হচ্ছে এক প্রকার পাথর
দুজনে এক সাথে ছুঁয়ে দিলে
নড়ে চড়ে কথা বলে, আলো বিকীরণ করে
ছুঁয়ে না দিলে
আলো না জ্বললে
ভালোবাসা কেবলই পাথর

দেশপ্রেম কেবলই বরফ
মিছিলের উত্তাপে গলে

>…

আদর্শ বর্গ আয়তনে
সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র পরিমাপের
একখন্ড মাটি নিয়ে হাতে তুলতেই সন্দেহ হলো
লাল নাকি ! মাটির মতো লোহাও লবন !

নানান চেহারা ছবি নানান ভঙ্গি
একটুকরো মাটির বর্গে
একেক আলোর নিয়মে একেক ঘটনা ফোটায়

অজ্ঞান হতে হতে মানুষেরা বিস্মিত হতে পারে
তবু, মাটি ধরে রাখে
আকাশের নীচের সকল ঘটনা

মাটি মাটিতে রাখলে মাটি
হাতে তুলে নিলে এই বাংলার মাটি
রক্তে ভিজে যায়

>…

ছেলেবেলায় একবার এক
সম্পন্ন আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে গিয়ে
কারুকার্যময় আলমারির ভিতরে রাখা
সুন্দর পুতুল দেখে হাত বাড়িয়ে ধরতে গিয়ে
আলমারির কাঁচ ভেঙে ফেলেছিলাম
পুতুলের কাছ থেকে ফিরে এসেছিলো
রক্তাক্ত ক্ষুব্ধ আঙুল

যৌবনে-
চমৎকার তিল দেখে
হাত দিয়ে ছুঁতে যেতেই
তোমার লাল গাল থেকে
উড়ে গেলো মাছি

এখন তো
চতুর্দিকে দেখতে শুনতে
চলতে ফিরতে শুধু বিভ্রান্তই হই
খরায় বৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে
আকাশ দেখতে দেখতে যখন
মেঘ দেখে উৎফুল্ল হই
অকস্মাৎ বুঝে ফেলি
মেঘ নয় আকাশ রেখেছে ঢেকে
আণবিক ধোঁয়া

গমের শিষের মতো কোমল
আমার স্বপ্ন যখন
শিশিরের স্বপ্নে বিভোর
ভোর না হতেই এই
আমাদের প্রশান্ত আকাশে জমে
পরমাণু বিস্ফোরণের ধোঁয়া

ভেজা ঠোঁট দেখে যখন ভাবি
চুম্বনের এই বুঝি উৎকৃষ্ট সময়
ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে যেতেই দেখি
ঘৃণা যেন জমাট চাঁচের মতো
কঠিন জমেছে