Archive for the ‘মাহবুব লীলেন’ Category

>…

বৃক্ষের কোনো মূল্য নেব না আমি

ঘরবাড়ি মাটি ঘটিবাটি স্বপ্ন সবকিছু নিলামে ওঠাও
তবু বৃক্ষের জন্য কোনো চাইব না দাম

আদিবাসী মানুষের মতো মাটি কামড়ে পড়ে থাক বৃক্ষ সকল
বৃক্ষের প্রযত্নেই আমি ঠিকানা বলব উদ্বাস্তু দিনে;
                    ওই যে। ওই যে গাছ দেখা যায় ওখানে আমার বাড়ি
                    আমার ভাইয়েরা এখনো ওখানে থাকে

ওই মাটির দাবিতে আমি ফিরে এসে ডাক দেবো বৃক্ষকে আবার;
                    আমি এসেছিরে ভাই
                    আমিও তোর মতো এ বাড়ির লোক

বৃক্ষরা থাক- বৃক্ষেরা বড়ো হোক এ মাটির কোলে
মাটি বেচে দিলেও বৃক্ষের মালিকানা রইলো আমার

২০০১.০৩.০৯

>…

পুষ্পিতা ফিরে এসে আবার ফিরে গেলে থেকে যায় বহু কামড়ের দাগ
মনের মেঝেতে পড়ে থাকে পড়ে-ফেলা পাঠ্য বইয়ের বিবর্ণ পাতা

এ জীবনে পুষ্পিতা ফিরবেন না আর

সমস্ত সূত্র যাচাই করে সব দায় তিনি শেষ করে গেছেন
বিদ্যালয় থেকে ভালবাসার সমস্ত ক্লাশ তুলে নিতে নিতে বলে গেছেন তিনি
ভালবাসা তোমার জন্য নয়। ভালবাসার মতো করে তৈরি করা হয়নি তোমাকে বাবুই
তুমি বন্ধুত্বের পাঠ নিয়ে পড়াশোনা করো;
অসুস্থ হলে তোমার জন্য ডাক্তার ডেকে দেবো আমি
মাঝে মাঝে সংবাদ নেব। বিশেষ দিনে তোমার জন্যও কিছু উপহার কিনব
                                                    আর…
তুমি ভালো থেকো। কষ্ট নিও না মনে

ভালবাসার সমস্ত সরঞ্জাম গুছিয়ে পুষ্পিতা আবার ফিরে যান সামাজিক সংসারে তার
যাবার আগে ডেকে বলেন- শোনো। তাকে রেখে গেলাম
সে তোমাকে ডেকে দেবে ঘুম থেকে। বলে দেবে খাওয়ার সময় অথবা জন্ডিসের টিকা
নেবার দিন। সব তাকে বুঝিয়ে দিয়েছি আমি
কষ্ট হবে না তোমার। আমিতো আছিই

আমিতো আছিই বলে না থাকার কথা জানিয়ে দেন পুষ্পিতা আজ
কষ্ট না হবার কথা বলে কষ্টের ধরন চিনিয়ে দেন পুষ্পিতা আজ
পুষ্পিতা আজ আমাকে দিয়ে যান এক মাতালের জিম্মা করে

নিজে সে মাতাল হয়ে আমাকে ঘুম থেকে তোলে ডেকে
ভালোবাসা পুড়িয়ে নেশা করে আর আমাকে আদেশ করে- ভালো লাগছে না আমার
আমাকে আদর করো। মনে রাখার মতো করে ভালবাসো আমাকে এখন

শুধু সে বোঝে না কিসে ভালো লাগে আর লাগে না আমার
সে পুষ্পিতা নয়। পুষ্পিতার নিয়োগ করা এক পেশাদার নার্স

২০০৪.০৩.১১

>…

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস নাকি মাঝে মাঝে কেটে ফেলা পায়েও চুলকানি অনুভব করতেন
আর চুলকাতে গিয়ে দেখতেন ওখানে পা নেই; কাঠের এক ডামি

হয়তোবা কেটে ফেলা পায়ে পুরনো কোনো মশার কামড় মনে হয়ে যেত তার; তিনি হাত
বাড়াতেন
এবং দেখতেন তার একটা পা নেই

আমাদেরও অন্তরে বহুকিছু ডামি করে নিয়েছি আমরা সৌন্দর্য ও সভ্যতার নামে
বহুকিছু ফেলা হযে গেছে ছেঁটে; বহু অঙ্গ বিকি হয়ে গেছে ভাত আর ভর্তার দামে
কিন্তু কোথাও আমাদের কোনো কামড়ের স্মৃতি নেই। কোন অবচেতন পিঁপড়াও আমাদের
মনে করিয়ে দেয় না আমরা কেউই এখন আর না আছি না পূর্ণ মানুষ- না সম্পূর্ণ বাঙাল

কেননা ইলিয়াসের পায়ে ছিল কাঠ; আর আমাদের হৃৎপিণ্ডে প্লাস্টিক- হৃদয়ে সিমেন্ট

২০০৫.০৮.২৩

>…

ভালোবাসি বলেই তোকে এত দুঃখ দেই প্রতিদিন

আবেগের খোলস ভেঙ্গে সাংসারিক দাবি ও অধিকারে তোর কাছে যাই
ছেড়ে চলে আসি
     ফেলে চলে আসি

নেই প্রত্যাশা- নেই অভিমান
নেই জীবনে জীবন জড়ানো স্বপ্নের জাল
তবু কী অদ্ভুত জড়িয়ে থাকা; বৃক্ষ ও মাটিতে বটের লতানো শেকড়

ভালোবাসি বলেই ভালো না বেসেও কেটে যায বহুদিন
ভালবাসি বলেই ভালবাসার কথাটাই বলা হয় না তোকে

১৯৯৯.০৯.০৫

>…

জুলিয়েট সে নয়
বারান্দায় দাঁড়ানোর বয়স তার নেই
সে থাকে ঘরে

কলায় বিশ্বস্ত আর কামে নিরাপদ ত্রিশোর্ধ্ব নারী সে
পেশাদারি কুশলে নাড়াতে জানে প্রেমে ও খেলায়
ঠিক ঠিক জানে সে কোনখানে চেপে দিলে বুক
দারুণ শীতে আমি আর উঠব না কেঁপে
কোনখানে ছুঁয়ে দিলে হাত আমিও ছড়াব আগুনের ফুল

সে কুমারী নয়
শরীরের ভয়ে স্বমেহনের অসহ্য দায় তার নেই
শরীরকে জানে সে সংসার ও স্বপ্নের মাপে
মন আর দেহ দিয়ে টেনে
মাটির গভীর থেকে সুখ তুলে এনে
সে জানে
ত্রিশোর্ধ্ব বয়সকে বেঁধে রাখতে শাড়ির সুতায়

২০০২.০২.১৫

>…

এই দুর্দান্ত বৃষ্টির দিনে কোথায় পুষ্পিতা তুমি
আমাকে বাদ দিয়ে কি তোমার শহরেও বৃষ্টি হয়
তুমি কি তাকে অনুমতি দাও তোমার শরীরে পড়ার

এই বেহায়া বৃষ্টির দিনে কাকে শোনাও তুমি বৃষ্টির সুর-
                     কাকে দেখাও ভেজা আগুনের ভাঁজ
বৃষ্টির কসম কেটে কাকে আজ তুমি নিজের শহরে ডাকো

আমি জানি আমি আর নই সে মানুষ এখন
তুমি কি এখন অন্য কারো রক্ত খাও পুষ্পিতা ?