Archive for the ‘দাউদ হায়দার’ Category

>…
প্রেম দ্যাখো বয়স মানেনা কোনদিন
ছোটবড় তালার মতো সব বয়সের কপাটে ঝুলে পড়ে হঠাৎ

প্রেম, সবুজ নিসর্গ থেকে পলাতক কয়েদীর মতোন নিঃশব্দে বেরিয়ে
                           আসে দ্রুত
ঠাঁই নেয় বিভিন্ন লোকালয়ে; খেলা করে সকাল বিকাল
তোলপাড়ে ভেঙে যায় নীলিমার আজীবন আশীর্বাদ-গড়ে তোলে
                           সুখ-দুঃখ
             পড়ে থাকে বয়স্কদের দারুণ চোখ

প্রেম, সেতো বয়স মানে নি কোনদিন- বুঝি তাই
তীক্ষ্ণ চকচকে সোনার ছুরি এনে বসিয়ে দেয় সকল প্রহরে
মেতে ওঠে ভয়াবহ বন্যার জলের মতো বাদশাহী হৃদয়ে-এবং
                           ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় পারিবারিক স্নেহ-মমতা
অথচ শুধু বেঁচে থাকে পরস্পর হৃদয়ের সুন্দর দৃশ্যাবলী !

                            ।২।
প্রেম, একটা ক্ষুধার্ত হিংস্র বাঘ; নিমেষে গ্রাস করে দীর্ঘকায় শরীর
প্রচণ্ড থাবায় কখনো আবার ছিড়ে নেয় লালিত মাংস-ছিটিয়ে দেয়
                           বিষাক্ত লবণ
                           জ্বলতে থাকে আজীবন !
প্রেম; য্যানো গোলাপ-নীলিমা-নিসর্গ-নক্ষত্রে মোড়া আদুরে পুতুল-
নির্জনে থাকেনা পড়ে; অথচ একবার উপযুক্ত হৃদয়ে ঠাঁই পেলে কেউই
                           রুখতে পারেনা সহজে এবং
                           সৃষ্টি করে বিশাল বাগান
যা কখনো ফেলে রেখে কোথাও যাওয়া যায় না; শুধু ঈশ্বরের মতো
             ক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে যায়মুহূর্তে !

>…

এক মাঘে শীত যায় না, দিন আসছে

বুঝলে হে, মৃতেরা যখন জেগে উঠবে, বলে রাখছি
সমস্ত দিনের গুরুভার তোমাকেই বইতে হবে

বাড়ছে দিনের তাপমাত্রা, যে-সব পাজির পা-ঝাড়ারা
রৌদ্র আর জ্যোত্‍স্নাকে এক করে দ্যাখে,
প্রতিসরণের বিভাবে হঠাত্‍ সংঘাতুর হয়ে যায়, জেনো

শীত মানেই তুষারাচ্ছন্ন নয়, পৌষের মাঠও পোড়ে সূর্যের ঠাণ্ডা রোদ্দুরে।

>…

সমস্ত আবর্ত থেকে ফিরে আসো, বলেছি কি ?
_সে কথা বলিনি৷

বলেছিলাম, আমাদের কালপর্বে যে-ভাঙন
উত্‍স কোথায় এই চণ্ড-সামাজিকতার ?

আজকে যে-স্তরগুলি তৈরি হয়ে আছে
আমরাই কি নির্মাণ করিনি ঘূর্ণিপাক ?

শববাহকেরা এখন বৃত্তের ভিতরে ঘুরে বেড়াচ্ছে
শ্মশানযাত্রীরা নদীর ঠিকানা ভুলে
দণ্ডকারণ্যের দিকে ধাবমান

আর দ্যাখো,
ভূমিকে নির্ভূম করে ভূস্বামীরা আগুন দিচ্ছে চুল্লীতে

সব প্রতিরোধ ভেঙে গেলে
কোনো সূচনা, প্রবাহ থাকবে না?

বলেছিলাম, বজ্র-ভরা দিনগুলো আবার ফিরে আসুক, স্রোতের
বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাই

>…

জন্মান্ধ বললে ভুল হবে৷ ইদানীং আমার চোখ
ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে

বাতাস কি মুখরিত, আর্তনাদে?

সঞ্জয়, যুদ্ধের গতি কোন দিকে?
পাণ্ডবরা কী রচনা করেছে বূ্হ্য? অর্জুণ কী এখনো
কুরুক্ষেত্রে?

কোন্ মন্ত্রবলে প্রতিপক্ষ দুর্জয়, সঞ্জয়?

বলো, তবে কী শূন্য হাতে কেবলি বিলাপ, আমার? গর্ভগৃহে
পালিয়ে জীবন? না-কি
অন্ধতাই জীবন, করুণাঘন মৃত্যু?

>

ঘরময় একটি পাতাবাহার।
আজ, জন্মদিন অরুণার

চোখ দুটি যামিনী রায়ের আঁকা,
মুখখানি প্রথম কদমফুল। মন্দাক্রান্ত ছন্দ-মাখা

আষাঢ়স্য প্রথম দিবস। বিরহের গান

আজ তার জন্মদিন। নদীও আবেগে ছন্দময়।
দু’কূল প্লাবিত। সূর্যাস্তেও সূর্যোদয়

_তোমাকেই জানি জীবনের চলন্তিকা, অভিধান

>

ভীষণ ক্ষুধার্ত, ভীষণ তৃষিত।
দিন যায় অনাহারে। অক্ষর বর্জিত
জ্বলন্ত সময়। ব্রাত্য মানুষের গল্প
কে লেখে?_ যেটুকু লেখা হয় অতীব সামান্য, অল্প

নিকট স্মৃতির মধ্যে জেগে আছে একটি ঘটনা। বাকি সব গৌণ।
মাতৃভাষায় যে শব্দ কাম, তথা যৌন
উথালপাতাল হলো বৃষ্টির সন্ধ্যায়।

মেঘের গর্জন। জলের নষ্টামি। বারান্দায়।

নস্টালজিয়ার নিম্নচাপ-উচ্চচাপ আছে। ভাবানুষঙ্গে হঠাৎ
জড়ো হলে বেড়ে যায় প্রবণতাময় সন্ধ্যা, রাত

>

পরমাণু-দেশে নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে
কথা বলতে চাই। বেয়োনেট উঁচিয়ে
আমার অস্থি-মজ্জা পাহারা দেবে,
এটাই তবে সাংবিধানিক?

কীভাবে গর্দান নেবে,
ভাবছো? তুমি কি সেই অস্ত্রধারী, আধিকারিক?

আজ রাতে পাখিদের উৎসব চলছিল
আমন্ত্রিত আমাকে একটি খড়কুটো দিল,
তাই নিয়ে উৎসাহে মেতে উঠি

−লক্ষ করি, চারপাশে বিরুদ্ধ ভ্রুকুটি

নিরস্ত্রীকরণে কেন আমি পাখির সঙ্গ নিয়েছিলাম
কেন বলেছিলাম, চাই বনজঙ্গলঘেরা একটি সবুজ গ্রাম?

০৯.০৪.০৯
বার্লিন, জার্মানি

>

মাঝে মাঝে তোমার কথা ভাবি

আকাশে জমেছে মেঘ, বাতাসে বৃষ্টির গান
রাত্তির বড় দীর্ঘ; কিছুতেই
ঘুম আর আসছে না ।একবার এপাশ, একবার ওপাশ, আর
বিশ্বচরাচর জুড়ে… নিথর স্তব্ধতা ।

মাঝে মাঝে মনে হয়
অসীম শূন্যের ভেতর উড়ে যাই ।
মেঘের মতন ভেসে ভেসে, একবার
বাংলাদেশে ঘুরে আসি ।

মনে হয়,মনুমেন্টের চূড়ায় উঠে
চিতকার ক’রে
আকাশ ফাটিয়ে বলি;
দ্যাখো, সীমান্তে ওইপাশে আমার ঘর
এইখানে আমি একা, ভীনদেশী ।
২৫।১০।১৯৮৩

>

“জন্মই আমার আজন্ম পাপ, মাতৃজরায়ু থেকে নেমেই জেনেছি আমি
সন্ত্রাসের ঝাঁঝালো দিনে বিবর্ণ পত্রের মত হঠাৎ ফুৎকারে উড়ে যাই
পালাই পালাই সুদূরে

চৌদিকে রৌদ্রের ঝলক
বাসের দোতলায় ফুটপাতে রুটির দোকানে দ্রুতগামী
নতুন মডেলের
চকচকে বনেটে রাত্রির জমকালো আলো
ভাংগাচোরা চেহারার হদিস

ক্লান্ত নিঃশব্দে আমি হেঁটে যাই
পিছনে ঝাঁকড়া চুলওয়ালা যুবক। অষ্টাদশ বর্ষীয়ার নিপুণ ভঙ্গী
দম্পতির অলৌকিক হাসি প্রগাঢ় চুম্বন

আমি দেখে যাই, হেঁটে যাই, কোথাও সামান্য বাতাসে উড়ে যাওয়া চাল-
অর্থাৎ আমার নিবাস।

ঘরের স্যাঁতসেতে মেঝেয় চাঁদের আলো এসে খেলা করে
আমি তখন সঙ্গমে ব্যর্থ, স্ত্রীর দুঃখ অভিমান কান্না
সন্তান সন্তুতি পঙ্গু
পেটে জ্বালা, পাজরায় তেল মালিশের বাসন উধাও-
আমি কোথা যাই? পান্তায় নুনের অভাব।

নিঃসংগতাও দেখেছি আমি, উৎকন্ঠার দিনমান জ্বলজ্বলে বাল্বের মতোন
আমার চোখের মতো স্বজনের চোখ-
যেন আমুন্ড গ্রাস করবে এই আমাকেই
আমিই সমস্ত আহার নষ্ট করেছি নিমেষে।

শত্রুর দেখা নেই, অথচ আমারি শত্রু আমি-
জ্বলন্ত যৌবনে ছুটি ফ্যামিলি প্ল্যানিং কোথায়
কোথায় ডাক্তার কম্পাউন্ডার
যারা আমাকে অপারেশন করবে?

পুরুষত্ব বিলিয়ে ভাবি, কুড়ি টাকায় একসের চাল ও অন্যান্য
সামান্য দ্রব্যাদী মিলবে তো?
আমার চৌদিকে উৎসুক নয়ন আহ্লাদী হাসি
ঘৃণা আমি পাপী
এরা কেন জন্ম নেয়?
এরাই তো আমাদের সুখের বাধা অভিশাপ।
মরণ এসে নিয়ে যাক, নিয়ে যাক
লোকালয়ের কিসের ঠাঁই এই শত্রুর?
-বলে
প্রাসাদ প্রেমিকেরা

আমিও ভাবি তাই, ভাবি নতুন মডেলের চাকায় পিষ্ট হবো
আমার জন্যই তোমাদের এত দুঃখ
আহা দুঃখ
দুঃখরে!

আমিই পাপী, বুঝি তাই এ জন্মই আমার আজন্ম পাপ।

[sachalayatan]