Archive for the ‘হেলাল হাফিজ’ Category

>

তোমাকে শুধু তোমাকে চাই, পাবো?
পাই বা না পাই এক জীবনে তোমার কাছেই যাবো।

ইচ্ছে হলে দেখতে দিও, দেখো
হাত বাড়িয়ে হাত চেয়েছি রাখতে দিও, রেখো

অপূণতায় নষ্টে-কষ্টে গেলো
এতোটা কাল, আজকে যদি মাতাল জোয়ার এলো
এসো দু’জন প্লাবিত হই প্রেমে
নিরাভরণ সখ্য হবে যুগল-স্নানে নেমে।

থাকবো ব্যাকুল শর্তবিহীন নত
পরস্পরের বুকের কাছে মুগ্ধ অভিভূত।

১০.৩.৮২

>

একবার ডাক দিয়ে দেখো আমি কতোটা কাঙাল,
কতো হুলুস্থূল অনটন আজম্ন ভেতরে আমার।

তুমি ডাক দিলে
নষ্ঠ কষ্ঠ সব নিমিষেই ঝেড়ে মুছে
শব্দের অধিক দ্রুত গতিতে পৌছুবো
পরিণত প্রণয়ের উৎসমূল ছোঁব
পথে এতোটুকু দেরিও করবো না।
তুমি ডাক দিলে
সীমাহীন খাঁ খাঁ নিয়ে মরোদ্যান হবো,
তুমি রাজি হলে
যুগল আহলাদে এক মনোরম আশ্রম বানাবো।

একবার আমন্রণ পেলে
সব কিছু ফেলে
তোমার উদ্দেশে দেবো উজাড় উড়াল,
অভয়ারণ্য হবে কথা দিলে
লোকালয়ে থাকবো না আর
আমরণ পাখি হয়ে যাবো, -খাবো মৌনতা তোমার

>

আমি এখন অন্য মানুষ ভিন্ন ভাবে কথা বলি
কথার ভেতর অকথিত অনেক কথা জড়িয়ে ফেলি
এবং চলি পথ বেপথে যখন তখন।

আমি এখন ভিন্ন মানুষ অন্যভাবে কথা বলি
কথার ভেতর অনেক কথা লুকিয়ে ফেলি,
কথার সাথে আমার এখন তুমুল খেলা
উপযুক্ত সংযোজনে জীর্ণ-শীর্ণ শব্দমালা
ব্যঞ্জনা পায় আমার হাতে অবলীলায়,
ঠিক জানি না পারস্পরিক খেলাধূলায়
কখন কে যে কাকে খেলায়।

অপুষ্টিতে নষ্ট প্রাচীন প্রেমের কথা যত্রতত্র কীর্তন আমার
মাঝে মধ্যে প্রণয় বিহীন সভ্যতাকে কচি প্রেমের পত্র লিখি
যেমন লেখে বয়ঃসন্ধি-কালের মানুষ নিশীথ জেগে।

আমি এখন অন্য মানুষ ভিন্নভাবে চোখ তুলে চাই
খুব আলাদা ভাবে তাকাই
জন্মাবধি জলের যুগল কলস দেখাই,
ভেতরে এক তৃতীয় চোখ রঞ্জনালোয় কর্মরত
সব কিছু সে সঠিকভাবে সবটা দেখে এবং দারুণ প্রণয় কাতর।

আমি এখন আমার ভেতর অন্য মানুষ গঠন করে সংগঠিত,
বীর্যবান এক ভিন্ন গোলাপ এখন কসম খুব প্রয়োজন।

১০.১১.৮১

>

এই নাও বাম হাত তোমাকে দিলাম।
একটু আদর করে রেখো, চৈত্রে বোশেখে
খরা আর ঝড়ের রাত্রিতে মমতায় সেবা ওশুশ্রূষা দিয়ে
বুকে রেখো, ঢেকে রেখো, দুর্দিনে যত্ন নিও
সুখী হবে তোমার সন্তান।

এই নাও বাম হাত তোমাকে দিলাম।
ও বড়ো কষ্টের হাত, দেখো দেখো অনাদরে কী রকম
শীর্ণ হয়েছে, ভুল আদরের ক্ষত সারা গায়ে
লেপ্টে রয়েছে, পোড়া কপালের হাত
মাটির মমতা চেয়ে
সম্পদের সুষম বন্টন চেয়ে
মানুষের ত্রাণ চেয়ে
জন্মাবধি কপাল পুড়েছে,
ওকে আর আহত করো না, কষ্ট দিও না
ওর সুখে সুখী হবে তোমার সন্তান।

কিছুই পারিনি দিতে, এই নাও বাম হাত তোমাকে দিলাম।

২৩.৭.৮০

>

দুই ইঞ্চি জায়গা হবে?
বহুদিন চাষাবাদ করিনা সুখের।

মাত্র ইঞ্চি দুই জমি চাই
এর বেশী কখনো চাবো না,
যুক্তিসঙ্গত এই জৈবনিক দাবি খুব বিজ্ঞানসম্মত
তবু ওটুকু পাবো না
এমন কী অপরাধ কখন করেছি!

ততোটা উর্বর আর সুমসৃণ না হলেও ক্ষতি নেই
ক্ষোভ নেই লাবন্যের পুষ্টিহীনতায়,
যাবতীয় সার ও সোহাগ দিয়ে
একনিষ্ঠ পরিচর্যা দিয়ে
যোগ্য করে নেবো তাকে কর্মিষ্ঠ কৃষকের মত।

একদিন দিন চলে যাবে মৌসুম ফুরাবে,
জরা আর খরায় পীড়িত খাঁ খাঁ
অকর্ষিত ওলো জমি
কেঁদে-কেটে কৃষক পাবে না।

১২.১১.৮১

>


মানব জন্মের নামে হবে কলঙ্ক হবে
এরকম দুঃসময়ে আমি যদি মিছিলে না যাই,
উত্তর পুরুষে ভীরু কাপুরুষের উপমা হবো
আমার যৌবন দিয়ে এমন দুর্দিনে আজ
শুধু যদি নারীকে সাজাই।

>


কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
আমি আর লিখবো না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
ভজন গায়িকা সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস
ব্যর্থ চল্লিশে বসে বলবেন,–’পেয়েছি, পেয়েছি’।

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে
ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে,
বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসন্মানে সাদা দুতে-ভাতে।

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
আমাদের সব দুঃখ জমা দেবো যৌথ-খামারে,
সম্মিলিত বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে সমান সুখের ভাগ
সকলেই নিয়ে যাবো নিজের সংসারে।

>


আমার কবিতা আমি দিয়ে যাবো
আপনাকে, তোমাকে ও তোকে।

কবিতা কি কেবল শব্দের মেলা, সংগীতের লীলা?
কবিতা কি ছেলেখেলা, অবহেলা রঙিন বেলুন?
কবিতা কি নোটবই, টু-ইন-ওয়ান, অভিজাত মহিলা -সেলুন?

কবিতা তো অবিকল মানুষের মতো
চোখ-মুখ-মন আছে, সেও বিবেক শাসিত,
তারও আছে বিরহে পুষ্পিত কিছু লাল নীল ক্ষত।

কবিতা তো রূপান্তরিত শিলা, গবেষণাগারে নিয়ে
খুলে দেখো তার সব অণু-পরমাণু জুড়ে
কেবলি জড়িয়ে আছে মানুষের মৌলিক কাহিনী।
মানুষের মতো সেও সভ্যতার চাষাবাদ করে,
সেও চায় শিল্প আর স্লোগানের শৈল্পিক মিলন,
তার তা ভূমিকা চায় যতোটুকু যার উৎপাদন।

কবিতা তো কেঁদে ওঠে মানুষের যে কোনো অ-সুখে,
নষ্ট সময় এলে উঠানে দাঁড়িয়ে বলে,–
পথিক এ পথে নয়
‘ভালোবাসা এই পথে গেছে’।

আমার কবিতা আমি দিয়ে যাবো
আপনাকে, তোমাকে ও তোকে।

>


আমার কষ্টেরা বেশ ভালোই আছেন,
প্রাত্যহিক সব কাজ ঠিক-ঠাক করে চলেছেন
খাচ্ছেন-দাচ্ছেন, অফিসে যাচ্ছেন,
প্রেসক্লাবে আড্ডাও দিচ্ছেন।

মাঝে মাঝে কষ্টেরা আমার
সারাটা বিকেল বসে দেখেন মৌসুমী খেলা,
গোল স্টেডিয়াম যেন হয়ে যায় নিজেই কবিতা।

আজকাল আমার কষ্টেরা বেশ ভালোই থাকেন,
অঙ্কুরোদ্‌গম প্রিয় এলোমেলো যুবকের
অতৃপ্ত মানুষের শুশ্রূষা করেন। বিরোধী দলের ভুল
মিছিলের শোভা দেখে হাসেন তুমুল,
ক্লান্তিতে গভীর রাতে ঘরহীন ঘরেও ফেরেন,
নির্জন নগরে তারা কতিপয় নাগরিক যেন
কতো কথোপকথনে কাটান বাকিটা রাত,
অবশেষে কিশোরীর বুকের মতন সাদা ভোরবেলা
অধিক ক্লান্তিতে সব ঘুমিয়ে পড়েন।

আমার কষ্টেরা বেশ ভালোই আছেন, মোটামুটি সুখেই আছেন।
প্রিয় দেশবাসী;
আপনারা কেমন আছেন?

>


ইচ্ছে ছিলো তোমাকে সম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো
ইচ্ছে ছিলো তোমাকেই সুখের পতাকা করে
শান্তির কপোত করে হৃদয়ে উড়াবো।

ইচ্ছে ছিলো সুনিপূণ মেকআপ-ম্যানের মতো
সূর্যালোকে কেবল সাজাবো তিমিরের সারাবেলা
পৌরুষের প্রেম দিয়ে তোমাকে বাজাবো, আহা তুমুল বাজাবো।

ইচ্ছে ছিলো নদীর বক্ষ থেকে জলে জলে শব্দ তুলে
রাখবো তোমার লাজুক চঞ্চুতে,
জন্মাবধি আমার শীতল চোখ
তাপ নেবে তোমার দু’চোখে।

ইচ্ছে ছিল রাজা হবো
তোমাকে সাম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো,
আজ দেখি রাজ্য আছে
             রাজা আছে
             ইচ্ছে আছে,
শুধু তুমি অন্য ঘরে।