Archive for the ‘সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮২ – ১৯২২)’ Category

>…
কোন্ দেশেতে তরুলতা
        সকল দেশের চাইতে শ্যামল ?
কোন্ দেশেতে চলতে গেলেই
        দলতে হয় রে দূর্বা কোমল ?
কোথায় ফলে সোনার ফসল,
        সোনার কমল ফোটে রে ?
সে আমাদের বাংলাদেশ,
        আমাদেরই বাংলা রে !

কোথায় ডাকে দোয়েল-শ্যামা
        ফিঙে নাচে গাছে গাছে ?
কোথায় জলে মরাল চলে,
        মরালী তার পাছে পাছে;
বাবুই কোথা বাসা বোনে,
        চাতক বারি যাচে রে ?
সে আমাদের বাংলাদেশ
        আমাদেরই বাংলা রে !

>…
কুকুর আসিয়া এমন কামড়
           দিল পথিকের পায়
কামড়ের চোটে বিষদাঁত ফুটে
           বিষ লেগে গেল তায়।

ঘরে ফিরে এসে রাত্রে বেচারা
           বিষম ব্যথায় জাগে,
মেয়েটি তাহার তারি সাথে হায়
           জাগে শিয়রের আগে।

বাপেরে সে বলে ভর্ৎসনা-ছলে
           কপালে রাখিয়া হাত,
“তুমি কেন বাবা, ছেড়ে দিলে তারে
           তোমার কি নেই দাঁত !”

কষ্টে হাসিয়া আর্ত কহিল
           “তুই রে হাসালি মোরে,
দাঁত আছে বলে কুকুরের পায়
           দংশি কেমন করে !

কুকুরের কাজ কুকুর করেছে
          কামড় দিয়েছে পায়,
তা ব’লে কুকুরে কামড়ানো কি রে
          মানুষের শোভা পায় ?”

>…
জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে
            সে জাতির নাম মানুষ জাতি;
এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত
            একই রবি শশী মোদের সাথী।
শীতাতপ ক্ষুধা তৃষ্ণার জ্বালা
            সবাই আমরা সমান বুঝি,
কচি কাঁচাগুলি ডাঁটো করে তুলি
            বাঁচিবার তরে সমান যুঝি।
দোসর খুঁজি ও বাসর বাঁধি গো,
            জলে ডুবি, বাঁচি পাইলে ডাঙ্গা,
কালো আর ধলো বাহিরে কেবল
            ভিতরে সবারই সমান রাঙা।
বাহিরের ছোপ আঁচড়ে সে লোপ
            ভিতরের রং পলকে ফোটে,
বামুন, শূদ্র, বৃহৎ, ক্ষুদ্র
            কৃত্রিম ভেদ ধুলায় লোটে।…

বংশে বংশে নাহিক তফাত
            বনেদি কে আর গর্-বনেদি,
দুনিয়ার সাথে গাঁথা বুনিয়াদ্
            দুনিয়া সবারি জনম-বেদী।

>
সবচেয়ে যে ছোটো পিঁড়িখানি
             সেইখানি আর কেউ রাখেনা পেতে,
ছোট থালায় হয় নাকো ভাত বাড়া,
             জল ভরে না ছোট্ট গেলাসেতে;
বাড়ির মধ্যে সব-চেয়ে যে ছোটো
             খাবার বেলা কেউ ডাকে না তাকে,
সব-চেয়ে যে শেষে এসেছিল,
             তারই খাওয়া ঘুচেছে সব-আগে ।

সব-চেয়ে যে অল্পে ছিল খুশি
             খুশি ছিল ঘেঁষাঘেঁষির ঘরে,
সেই গেছে, হায়, হাওয়ার সঙ্গে মিশে,
             দিয়ে গেছে, জায়গা খালি করে ।
ছেড়ে গেছে পুতুল, পুঁতির মালা,
             ছেড়ে গেছে মায়ের কোলের দাবি;
ভয়-তরাসে ছিল যে সব-চেয়ে
             সেই খুলেছে আঁধার ঘরের চাবি ।…

চ’লে গেছে একলা চুপে চুপে–
             দিনের আলো গেছে আঁধার ক’রে;
যাবার বেলা টের পেলো না কেহ,
             পারলে না কেউ রাখতে তারে ধ’রে।
চলে গেলো, –পড়তে চোখের পাতা,–
             বিসর্জনের বাজনা শুনে বুঝি !
হারিয়ে গেলো–অজানাদের ভিড়ে,
             হারিয়ে গেলো-পেলাম না আর খুঁজি।

হারিয়ে গেছে–হারিয়ে গেছে, ওরে !
             হারিয়ে গেছে বোল-বলা সেই বাঁশি
হারিয়ে গেছে কচি সে মুখখানি,
             দুধে-ধোওয়া কচি দাঁতের হাসি।

আঁচল খুলে হঠাৎ স্রোতের জলে
             ভেসে গেছে শিউলি ফুলের রাশি ,
ঢুকেছে হায় শশ্মানঘরের মাঝে
             ঘর ছেড়ে তাই হৃদয় শশ্মান-বাসী ।

সবচেয়ে যে ছোটো কাপড়গুলি
             সেগুলি কেউ দেয় না মেলে ছাদে,
যে শয্যাটি সবার চেয়ে ছোটো
             আজকে সেটি শূন্যে পড়ে কাঁদে,
সব-চেয়ে যে শেষে এসেছিলো
             সে গিয়েছে সবার আগে সরে
ছোট্ট যে জন ছিল রে সব চেয়ে
             সে দিয়েছে সকল শূন্য করে ।