>…
গরুচোর বলে তারে
               ক’রো নাকো তুচ্ছ !
নিন্দুকে অকারণে
               রটাচ্ছে কুচ্ছো ।
গরু ছাড়া আর কিছু
               করে না তো চুরি সে !
তাও তো করেছে চুরি
               মোটে গোটা-কুড়ি সে ।
একদিন কি কাণ্ড
               হয়েছিল শোনো ভাই,
আমাদের বাড়ি থেকে
               নিয়ে গেল দুটো গাই !

কিন্তু হলে কি হবে,
               দেখি রাত পোহালে,
দুধ দু’য়ে হাঁড়ি ভ’রে
               রেখে গেছে গোহালে !
সেই কথা ভেবে, আহা,
               আজো হই মুগ্ধ,
ধনেপ্রাণে না মেরে সে
               রেখে গেল দুগ্ধ !
নিন্দুকে তবু বলে,
               “ব্যাটা মহা শয়তান !
অভিধান-মতে এটা
               গরু মেরে জুতোদান !”

>…
চড়ুইভাতির পাশেই নদীর কূল ছিল,
আনন্দে তাই সবার গলাই খুলছিল ।
ফুর্তিতে, খোশ গপ্পেতে মশগুল ছিল,
মাথায় তাদের হাল ফ্যাশানের চুল ছিল ।
            জনাচারেক আলুর খোসা ছুলছিল,
            গলায় তাদের রুমাল কি টাই ঝুলছিল ।
            দলের সাথে তিনঠেঙে এক টুল ছিল,
            সেটায় বসে দলের নেতা ঢুলছিল ।

আরো ক’জন বালতিতে জল তুলছিল
জল তোলাতেও অনেক হুলুস্থুল ছিল,
কেউবা গাছে দোলনা ছাড়াই দুলছিল,
খানিক দূরে খালের ওপর পুল ছিল
সেই খানে এক ডালিম গাছে ফুল ছিল,
ডালিম গাছের মগডালে বুলবুল ছিল।
            সবাই তখন বাড়ির কথা ভুলছিল,-
            চড়ুইভাতির আনন্দটাই মূল ছিল ।
            জানতো না কেউ কোথায় যে ভীমরুল ছিল,
            কামড় খেয়ে বুঝলো, তাদের হুল ছিল ।

>…
কেউ কি জানে কখন বসে
             তেঁতুল পাতায় ন’জন ?
পটল পেলে সবাই তো খায়,
             তুলতে জানে ক’জন ?

গুড়ের, পাটের, সব দালালের
             সবাই রাখে খবর,
কেউ কি জানে কোথায় থাকে
             আসল দালাল ‘ফপর’ ?

সবার কেবল ঘরের খেয়ে
             মোষ তাড়ানোর রোগ
কেউ কি জানে কখন ঢোকে
             বাঘের ঘরে ঘোগ ?

ধোপার কুকুর কেউ জানে না
             ঘাটকা, নাকি ঘরকা,
সবাই কেবল তেল দিতে চায়
             পেলেই পরের চরকা !

>…
বল্ তো বেআক্কেলে পেলিক্যান,
এত বড় ঠোঁট নিয়ে এলি ক্যান ?

ওটা কি কড়াই, ডাল রাঁধবার ?
অথবা নৌকো, ঘাটে বাঁধবার ?
কিংবা কাপড়-ধোয়া গামলা ?
নাকি ওটা আর-কোনো মামলা ?

ঠোঁট তো ঠোঁটের মতো হওয়া চাই-
ঠোট নয় আলমারী চারপাই !

যতটুকু লাগে তোর পেলিক্যান,
তার চেয়ে বেশী তুই পেলি ক্যান্ ?

>…
ঐ দেখা যায় লক্ষ্মী ছেলে
                পাঠ্য কেতাব পড়ে,
ঘাড়ের ওপর মুণ্ডুখানা
                হালকা তালে নড়ে ।

বানের তোড়ে বাঁধ ভেঙে যায়
                দেশ ভেসে যায় জলে,
ডাকাত এসে আগুন লাগায়
                কাদের বাড়ি জ্বলে,
কার বাড়িতে পড়ল রে বাজ,
                উড়ল ঝড়ে চাল-
তারই খোঁজে দাপিয়ে বেড়ায়
                দস্যি ছেলের পাল ।

কিন্তু আহা ! লক্ষ্মী ছেলে
                পাঠ্য কেতাব খুলে,
ইতিহাসের বীর-কাহিনী
                পড়ছে দুলে দুলে ।

>…
চোর পালালো ভালোই হল
            চ্যাঁচাস কেন তেড়ে ?
বুদ্ধি-মীটার দেখ লাগিয়ে
            বুদ্ধি গেছে বেড়ে ।

                   এত বুদ্ধি রাখবি কোথায়
                           মাটিতে রাখ পুঁতে
                   সেই খানেতে দেখবি পরে
                           গাছ হয়েছে তুঁতে !

সে গাছ যদি পোকায় কাটে
           করবি তবে কি ?
মাথার পরে চাপড়ে দিবি
           ঘৃৎ-কুমারীর ঘি !

                   সেই পচা ঘি’র গন্ধ পেলেই
                           চোর আসবে শেষে,
                   তখন তারে আচ্ছা করে
                           ধরিস যেন ঠেসে ।

>…
কক্ষনো নয়, কক্ষনো নয় !
মোটেই আমি পাইনাকো ভয়
             রাতের বেলা একলা শুয়ে ঘরে ।
যখন শুধু নিভলে বাতি
কাঁপিয়ে আসে আঁধার রাতি
             গা’টা যেন কেমন কেমন করে !
হঠাৎ কারা খাটের পাশে
ফিসফিসিয়ে বিশ্রী হাসে,
             হাওয়ার মতো খসখসিয়ে হাঁটে !
কড়কড়িয়ে দেওয়াল জুড়ে
ক্যালেন্ডারের পাতার সুরে
             করাত দিয়ে কেউ যেন কী কাটে !

কেউ যেন ভাই টিটকিরি দেয়,
কেউ বা মাথার তেল চেটে নেয়
             টিকটিকি আর তেলাপোকার মতো ।
বাইরে গাছে ঠিক তখুনি
‘ভুতুম ভুতুম’ আওয়াজ শুনি,-
             ধেৎতেরিকা, ভাল্লাগে না যতো—-।
ক্যানরে বাপু ! অন্ধকারে
উচ্চিংড়ের চিড়িৎকারে
             কার না গায়ে কদম-রোঁয়া ফোটে ?
সত্যি কথা, বিশ্বাস কর
আমার করে বুক ধড়ফড়
             অ্যালার্জিতে ! ভ-ভয়ে নয় মোটে !

>…
ঝন্ ঝন্ দুম দাম
        গেল ঘরদোর কি ?
আণবিক বোমা ফাটে ?
        নাকি এলো বর্গি ?
প্যালপিটেশান বাড়ে,
        কানে লাগে তালা রে,
কে কোথায় রয়েছিস্ –
        জান নিয়ে পালা রে !
ভয়ে ভীত মেহমান
        যেই যাবে পালাতে,
বাড়ির গিন্নি আসে
        খানা নিয়ে থালাতে !
“আরে আরে, ভয় নেই”
        হেসে বলে গিন্নি
“ও ঘরেতে আমাদের
        ছোট মেয়ে তিন্নি
খেলছে, যেমন খেলে
        আনমনে নিত্য ।”
মেহমান হতবাক
        শঙ্কিত চিত্ত ।

>…
         (১)
ঘুড়ি ওড়ায়, বেলুন ওড়ায়
        পায়রা ওড়ায় বেশ জানি,
রুমাল ওড়ায়, ঝাণ্ডা ওড়ায়,
        ধোঁয়া ওড়ায়, তাও জানি,
কিন্তু আমার খট্কা লাগে
যখন শুনি নবাববাগে,
কে নাকি কোন মেলায় গিয়ে
পয়সা ওড়ায় দু’হাত দিয়ে !

         (২)
তোমার গাড়ি তুমি হাঁকাও,
          আমার গাড়ি আমি,
‘মামার গাড়ি হাঁকিয়ে বেড়ান
          মামা এবং মামী’-
গরুর গাড়ি বললে কিন্তু
          খট্কা লাগে ভারী,-
তখন কি আর জনাব গরু
          হাঁকিয়ে বেড়ান গাড়ি ?

         (৩)
বুঝতে পারি ঘুরছে চাকা,
বনবনিয়ে ঘুরছে পাখা,
চরকা, লাটিম ঘুরছে জোরে
ঘড়ির কাঁটাও আস্তে ঘোরে,-
        ঘোরার জিনিস ঘোরেই যদি
              ভাবতে আজব লাগবে না তা-
        কিন্তু আমার খট্কা লাগে
              যখন শুনি ঘুরছে মাথা ।

>…
সাদা, কালো, লাল রঙ
          বিশেষণে ভরা,–
হলুদ, সবুজ, নীল,
          তাই মনমরা ।

কালোর বুঝিনা বাপু
          এত সখ কিসে,–
কভু হবে ‘কুচকুচে’
          কভু ‘মিশমিশে’ ।

‘টুকটুকে’ হয়ে শুধু
          লাল নয় শান্ত,
‘টকটকে’ হতে হবে
          নইলে প্রাণান্ত ।

‘ফকফকে’ পেলে সাদা
          চায় ‘ধবধবে’।–
আরো যত রঙ আছে
          তাদের কি হবে ?

‘নিশপিশে নীল’ যদি
          বলে ফেলে কেউ
তাহলেই তার পিছে
          লেগে যাবে ফেউ ।

সবুজকে দেবে নাকো
          হতে ‘খুজবুজে’
‘হলহলে হলুদে’ও
          দোষ পাবে খুঁজে !

বিশেষণে এ বিশেষ
          পক্ষপাতিত্ব,
দেখেশুনে মাঝে মাঝে
          জ্বলে যায় পিত্ত !